সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কিত তথ্য

বিস্তারিতঃ

সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ১৭-০৮-২০২৩ খ্রি. তারিখ সকাল ১০.০০ টায় ভার্চুয়ালি সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের অভ্যন্তরে ৮ টি জেলা (গোপালগঞ্জ, রংপুর, বাগেরহাট, রাঙ্গামাটি, সিলেট, পাবনা, ময়মনসিংহ, বরগুনা) এবং বৈদেশিক মিশন (মালয়েশিয়া, জেদ্দা, সিংগাপুর) এ ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন।

সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা থেকে ২০০৮ সনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করাসহ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে তিনি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা প্রদান করেছিলেন। যারই ধারাবাহিকতায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক ৩১-০১-২০২৩ খ্রি তারিখ “সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩” পাশ করা হয়। 

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ (সতের) কোটি। বর্তমানে গড় আয়ু ৭২.৩ বছর হলেও ভবিষ্যতে গড় আয়ু আরও বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশ (Demographic Dividend) এর আওতায় আছে। বর্তমানে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬২% কর্মক্ষম। গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি জনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বৃদ্ধি পাবে বিধায় একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। ১৮ বছরের অধিক বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা সম্ভব হলে তারা একটি সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতাভুক্ত হবেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর হলে ধীরে ধীরে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং আমাদের বয়স্ক জনসাধারণের সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বৎসর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বৎসরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীগণও এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বৎসর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন। চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বৎসর চাঁদা প্রদান করার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। সরকার কর্তৃক, সময়ে সময়ে, প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নিম্ন আয়সীমার নিচের নাগরিকগণের অথবা অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে প্রদান করবে।

সর্বজনীন পেনশনের আওতায় মোট ০৪টি স্কিম রয়েছে।  

১। প্রবাস (প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য)

২। প্রগতি (ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান/কর্মচারী)

৩। সুরক্ষা (স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকগণের জন্য)

৪। সমতা (স্বকর্মে নিয়োজিত অতি দরিদ্র নাগরিকগণের জন্য অংশ প্রদায়ক পেনশন স্কিম): 

প্রতিটি স্কিমের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মাসিক চাঁদার হার। 

প্রবাস (প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য) স্কিমে প্রবাসে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার অভিপ্রায় অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা প্রদানপূর্বক এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাস হতে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করাসহ প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন প্রাপ্য হবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ৫০০০/-, ৭৫০০/- এবং ১০০০০/- টাকা। 

এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এতদসঙ্গে সন্নিবেশিত হলোঃ